শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে সব কিছু। আদালত অঙ্গনও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে সেটাও বুঝে উঠা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। স্বাভাবিক হলেও সামনে অর্থনৈতিক ধাক্কা আছে সেই বিষয়টি পরিস্কার। যার ফলে নবীন, জুনিয়র ও মিডল সিনিয়র আইনজীবীদের মাঝে একরকম হতাশা কাজ করছে।অপরদিকে মর্যাদার ভয়ে কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতেও আছে অস্বস্তি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সকল আইনজীবী সমিতির মধ্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সস্থাপন করলেন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু করেছেন আইনজীবীদের মধে দূর্যোগকালীন ভাতা প্রদান।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে আইনজীবীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা তহবিলের দাবী জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০০ কোটি টাকার তহবিল পেলে সেখান থেকে সব জুনিয়র ও ক্ষতিগ্রস্ত আইনজীবীদের বিনা সুদে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে, যা তারা চার কিস্তিতে ২০২১ সালের মধ্যে পরিশোধ করবেন।
দেশে ৫৫ হাজারের বেশি আইনজীবী রয়েছেন জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, “এর মধ্যে একটি অংশ ‘জুনিয়র’ হিসেবে কাজ করছে। তাদের নিজস্ব আয় নেই। আদালত খোলা থাকলে দিনে সিনিয়ররা তাদেরকে কিছু টাকা দেন। এটাই তাদের একমাত্র অবলম্বন। আদালত বন্ধ থাকায় তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” জুনিয়রশিপ শেষ করে নতুন প্রাকটিস শুরু করা আইনজীবীরাও সমস্যায় আছেন জানিয়ে ‘তাদেরও প্রণোদনা তহবিলের সাহায্য প্রয়োজন’ বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
কুষ্টিয়া জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও লাইব্রেরী সম্পাদক শাতিল মাহমুদ বলেন ‘সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত স্ট্যাম্পসহ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি (মামলা পরিচালনার বিভিন্ন সময়ে) সরকারী কোষাগারে জমা হয়। বিচারক, কোর্ট কর্মকর্তা ও স্টাফদের যাবতীয় খরচ সরকার বহন করলেও রাজস্ব আদায়ের মুখ্য ভূমিকা পালনকারী বিজ্ঞ আইনজীবীগনের জন্য এতে কোন বরাদ্দ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছেন। তিনি আইনজীবীদের জন্য আপদকালীন ভাতার দাবী করেন। সেইসাথে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারী ও নির্বাহী কমিটির অন্যন্য সদস্যবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সমিতি নিজ উদ্যোগে আপদকালীন ভাতা প্রদানে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
কুষ্টিয়া জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রফিকুল ইসলাম সবুজ অভিযোগের সুরে বলেন, বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। প্রায় ৬০০০০ হাজার বিজ্ঞ আইনজীবীগন প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা বাৎসরিক ফি, ভেনাভোলেন্ট ফান্ড বার কাউন্সিলের একাউন্টে জমা করেন। স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে এই মুহূর্তে বার কাউন্সিল আইনজীবীবান্ধব প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেন। নতুবা এ সংস্থাটি একটি অকার্যকর ও শত্রু সংস্থা হিসেবে আইনজীবীদের কাছে পরিচিতি লাভ করবে।
কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী আবুল হাসিম জানান, আসন্ন দূর্দশা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তত্বাবধানে একটি তহবিল গঠন করা যেতে পারে। বর্তমান কমিটি দ্রুত একটি জরুরী তহবিল গঠন করে তা থেকে প্রাকটিসিং ল’ইয়ারদের আপদকালীন বরাদ্দ না দিলে বিজ্ঞ আইনজীবীরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে পড়ে যাবেন, এহেন পরিস্থিতিতে পেশাগত মান ইজ্জতের কথা চিন্তা করে খুব সিরিয়াসলি বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ যেনো সর্বদা সমাজে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে সে লক্ষ্যে পেশাগত মানোন্নয়ন অত্যাবশ্যক।’
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের নেতা নজীব উল্লাহ্ হিরু জানান, এখন তো সব কিছু বন্ধ। বার কাউন্সিলের মিটিং করার পরিস্থিতি নেই। যেহেতু ব্যক্তিগত প্রোটেকশন নেই, তাই সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তারপরও আমরা টেলিফোনে যোগাযোগ করছি। আমি নবীন আইনজীবীদের সংকটের বিষয়টি নিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। এছাড়া বার কাউন্সিলের মাননীয় ভাইস চেয়ারম্যানও আইনমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের দুইজনকেই মাননীয় আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, আইনজীবীদের সহায়তার বিষয়টি তিনি চিন্তা ভাবনা করছেন। কবে নাগাদ এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন বলে ধারণা করছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সামনে সরকারের সাধারণ ছুটি শেষ হলেই আমরা বার কাউন্সিল একটি জরুরি সভা ডেকে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারব বলে আশা করছি।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮